শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মাটিরাঙ্গায় বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ বরণ করেছে বিএনপি। কালের খবর জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যােগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত আওয়ামী দোসরদের রক্ষা করতে এখনো স্বেরাচারীদের হয়ে কাজ করছে প্রশাসন। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় ওয়াদুদ ভূইয়ার পক্ষ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে মিনারেল ওয়াটার ও কলম বিতরণ। কালের খবর রবিনটেক্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও কম্পটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেড এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপর হামলা। কালের খবর মা‌টিরাঙ্গায় আওয়ামীলী‌গ নেতা আব্দুল কাদের গ্রেফতার। কালের খবর ইসরাইয়েলের বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল মাটিরাঙ্গা। কালের খবর ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে রিপোর্টার্স ক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর ঢাকা- চিটাগাংরোড সড়কে বিআরটিএ মোবাইল কোর্টের অভিযান। কালের খবর গোমতি বি কে উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ-২০০৭ ঈদ পূর্ণমিলন ও রজতজয়ন্তী‌ উদযাপন। কালের খবর
সীতাকুণ্ডের প্রাচীন মেলা ও স্থানীয়দের নানা ব্যবসা। কালের খবর

সীতাকুণ্ডের প্রাচীন মেলা ও স্থানীয়দের নানা ব্যবসা। কালের খবর

 

মোঃ আশরাফ উদ্দিন, কালের খবর :

প্রায় ৩০০ বছর আগে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের সীতাকুণ্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় শিব চতুর্দশী মেলার প্রচলন শুরু হয়। সেই থেকে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে লাখ লাখ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভিড় জমান এ মেলায়।

হিন্দুশাস্ত্রমতে দেবাদিমহাদেব বলেছেন, “কলিকালে আমি চন্দ্রনাথ চন্দ্র শিখরে অবস্থান করিব।” “এই তীর্থ যিনি দর্শন করিবেন, তার আর পুনজন্ম হইবে না, তিনি স্বর্গবাসি হইবেন।” মূলত এই বিশ্বাস থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জীবনে একবার হলেও এই মহাতীর্থে ছুটে আসেন। সেই থেকে প্রতি বাংলা বছরের ফাল্গুন মাসে ৩ দিনব্যাপী শিব চতুর্দশী মেলা বসে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। আর এই মেলাকে ঘিরে জমে ওঠে স্থানীয়দের ব্যবসা বাণিজ্য। হরেক রকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন বিভিন্ন বসয়ের স্থানীয় বাসিন্দারা। সারা বছর পাহাড়ে বাগান করলেও মেলা এলে একটু বাড়তি আয়ের আশায় তারা ব্যবসায়ী হিসেবে হাজির হন। এতে ক্ষতি নেই তীর্থ যাত্রীদেরও। প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র পাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সীতাকুণ্ডের কলেজ রোড় থেকে দুই নম্বর পুল পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার এলাকায় অন্তত হাজার খানেক দোকান বসেছে। দুই নম্বর পুল থেকে মূল পাহাড় শুরু। সেখান থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড় খাঁড়া হয়ে উপরে ওঠে গেছে। বেশ আঁকাবাঁকা এ পাহাড় সুউচ্চ, কঠিন পথের। তীর্থ যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে লাঠি হাতে পাহাড়ে ওঠছেন। কেউ বিশ্রামও নিচ্ছেন মাঝেমধ্যে। তাদের সবার লক্ষ্য একটাই ১২০০ ফুট উচ্চতার চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ার ওঠা। সেখানে অবস্থিত শিব মন্দিরে শিবলিঙ্গে ডাবের পানি ঢালা। আর পূজা আর্চণা করে ফিরে আসা।

পাহাড়ের সরু পথ বেয়ে চন্দ্র নাথ পাহাড়ে ওঠলেও পথে পথে অসংখ্য দোকান। এসব দোকানের বেশিরভাগ হোটেল, রেস্তোরাঁ। এছাড়াও কেউ বিক্রি করছেন ডাব, কেউ পাহাড়ি বেল, বেলের শরবত, তেতুল, পানি, সীতার সুপারি, নাগ লতা, মোমবাতি, আগরবাতি, কলা, সিন্দুর, শাখা, তবলা, ঢোল, গীতা, ধর্মীয় নানা রকম বই ও পূজার বিভিন্ন উপকরণ। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে পাহাড়ি লাঠি।

জানা গেছে, বহু বছর ধরে সীতাকুণ্ডের স্থানীয়রা পাহাড় থেকে এক ধরণের লাঠি সংগ্রহ করে থাকেন। মূলত শিব চতুর্দশী মেলাকে ঘিরে ৩ মাস আগে থেকে এসব লাঠি সংগ্রহ শুরু করেন তারা। এরপর বাড়িতে নিয়ে সেগুলো প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে আগুনে পুড়িয়ে ও হলুদ মেখে বিশেষ ডিজাইন দিয়ে থাকেন। এসব লাঠি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। পাহাড়ে লাঠি ছাড়া ওঠা কষ্ট। তাইতো বেশিরভাগ যাত্রী লাঠি কিনে পাহাড়ে ওঠা শুরু করেন। লাঠির দোকানগুলো দুই নম্বর পুলের পূর্বে বসে থাকে। একেকটি লাঠির দোকানে ৩-৪ জন কাজ করে থাকে।

হবিগঞ্জ থেকে আসা সুনন্দ দাস নামে একজন তীর্থ যাত্রী বলেন, ১০০ টাকায় একটি লাঠি নিয়েছি। বেশ মজবুত ও আকর্ষণীয়। নানা রকমের লাঠি আছে দোকানগুলোতে। আকার ও ডিজানের উপর তারা দাম চাচ্ছে।

কুমিল্লা থেকে আসা লক্ষী রাণী দাস বলেন, আমার বয়স ৫০ বছরের বেশি। লাঠি থাকলে আমরা বিশ্বাস চন্দ্রনাথে ওঠে যেতে পারব। এই লাঠি বেশ উপকারী।

নুর ইসলাম নামে একজন লাঠি বিক্রেতা বলেন, লাঠির অনেক ইতিহাস। লাঠি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো বলে আমাদের এলাকার নাম লাঠিয়াল পাড়া। পাহাড় থেকে কাঁচা লাঠি সংগ্রহ করে নানা প্রক্রিয়ার পর আকর্ষণীয় রূপ দেওয়া হয়। এটি সাধারণ লাঠি নয়। চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা বলে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা শেষে এই লাঠি বাড়িতে নিয়ে যান।

মো. হাশেম বলেন, লাঠি বিক্রি করে আমাদের বেশ ভালো ব্যবসা হয়। এছাড়াও অনেকেই এ মেলাকে ঘিরে ব্যবসা করেন। কারো লাভ হয়। কারো লোকসান হয়। তবে দেশের নানান প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরাও আসেন শিব চতুর্দশী মেলায়। তারা রাতদিন এখানে থেকে পণ্য বিক্রি করেন। অনেক তীর্থ যাত্রী রান্না করে দলবলসহ খাওয়া দাওয়া করেন। তাদের জন্য লাকড়ী বিক্রি করে থাকেন কেউ কেউ। এ কাজে শিশুরা যোগ দেন।

পূজা করতে এসে পাহাড়ের স্মৃতি স্বরূপ সীতার সুপারি, নাগ লতা কিনে থাকেন তীর্থ যাত্রীরা। এই মেলায় তীর্থ করতে এসে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেন। গতকাল বুধবার পাহাড়ে ওঠতে গিয়ে ১ নারী, ১ পুরুষ, ও কিশোরীসহ ৩ জনের একইসাথে মৃত্যু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারকে হস্তান্তর করেছে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com